হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী: জনাব মনীর হোসায়েন খান হাওজা নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন: ধনী সমৃদ্ধ দেশে বসবাসরত গরীব জাতি ও জনগোষ্ঠীর উদাহরণ হচ্ছে ভারতীয়রা । আর এটাই হচ্ছে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পরিণতি ।
ব্রিটিশদের দালাল কতিপয় ভারতীয় ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবী দাবি করে যে ব্রিটিশ শাসন নাকি এর পূর্ববর্তী সকল মুসলিম শাসক ও সম্রাটের চেয়ে উত্তম ছিল ! কারণ ব্রিটিশ রাজ ভারতীয়দেরকে আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতা , শিক্ষা ব্যবস্থা , চিকিৎসা , শিল্প , প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত করিয়েছে ।
তিনি বলেন ভারতে রেল লাইন স্থাপন হচ্ছে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের যে সব সুকীর্তি ছিল সেগুলোর একটি । কিন্তু এ রেল লাইন স্থাপনে ভারতের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষিত না হয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের স্বার্থই সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণ করা হয়েছে । বাঙালায় ব্রিটিশরা নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে অপরিকল্পিত রেল লাইন স্থাপন করে বাংলাদেশের নদ- নদীর গতিপ্রবাহে বিঘ্ন ও ব্যাত্যয় ঘটিয়ে এ দেশে স্থায়ী বন্যা সমস্যার সৃষ্টি করেছে । তাই বাংলাদেশে বন্যা ও নদ-নদী হেজে মজে ভরাট হওয়ার সমস্যা দুষ্ট ব্রিটিশ শাসনের অবাঞ্ছিত উত্তরাধিকার ( মীরাস ) স্বরূপ যা মূলতঃ অপরিকল্পিত রেল লাইন বসানোর জন্যই হয়েছে । প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন : " আলোচ্য যুগে ( ১৯০৫ - ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৪২ বছরে ) কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদন অনেক হ্রাস পাইয়া ছিল । জঙ্গল পরিষ্কার করা এবং রেল লাইন বিস্তারের ফলে জলস্রোতের স্বাভাবিক গতিরোধ প্রভৃতি ইহার ( কৃষিজাত দ্রব্যের উৎপাদনের ব্যাপক হ্রাস ) জন্য দায়ী । " (( দ্র : বাংলাদেশের ইতিহাস , আধুনিক যুগ ( মুক্তি সংগ্রাম ) , পৃ : ৫৬৭ ))
মনীর হোসায়েন খান বলেন ১৯০৫ সালে যখন অধিকাংশ ভারতবাসী অভুক্ত এবং তীব্র খাদ্য সংকট ও ঘাটতির সম্মুখীন তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ , ভারতে রেল লাইন।উন্নয়নে ৩৫০ কোটি রুপিয়া ( টাকা ) এবং ফসলের ক্ষেতে সেচ দেয়ার জন্য সমগ্র ভারতবর্ষে মাত্র ৫০কোটি রুপিয়া ব্যায় করেছিল !!! অভুক্ত জনগণের খাবার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সেচের খাতে অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন অনুভব করে নি ব্রিটিশ রাজ ও তার ভারত শাসন ও শোষণকারী দুর্নীতিগ্রস্ত সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসন । কিন্তু ব্রিটিশ শাসকরা ঠিকই অর্থ অপচয় করেছে ভারতবর্ষে অপ্রয়োজনীয় রেললাইন বসানোর ক্ষেত্রে !!!! ভারতের জনগণ না খেয়ে দেয়ে মরলে মরুক ।ব্রিটেন নিজের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ ও প্রয়োজনেই ভারতবর্ষে রেল লাইন বসিয়েছে।যেমন : কোথাও বিদ্রোহ হলে বিদ্রোহ দমনের জন্য সরকার যেন ট্রেনে করে দ্রুত সৈন্য , অস্ত্র ও রসদ পত্র পাঠাতে পারে । আর এই রেল লাইন বসিয়ে ও সম্প্রসারণ করে ভারত বাসীদের কোনো লাভ হয় নি । কারণ ১৯১১ সাল থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এ দীর্ঘ ৩০ বছরে কেবল ২৯./. ভারতবাসী দুবেলা খাবার খেতে পারত এবং ৭১./. জনগণ হয় শুধু এক বেলা খাবার খেত নতুবা একদম অভুক্ত থাকত । ( প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের ১.৫ মিলিয়ন থেকে ৩.৫ মিলিয়ন অধিবাসী মৃত্যু বরণ করেছিল । ) তাই ৩৫০ কোটি টাকার রেল লাইন বসিয়ে ভারত বাসীর কী ফায়দাটা হয়েছিল ? তাতে কি তাদের খাদ্য সংকটের সমাধান হয়েছিল ? ১৯০৫ সালে যেখানে রেল খাতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারল সেখানে ওই একই বছর অভুক্ত ভারত বাসীদের খাদ্য সংকট নিরসন না করে শস্য উৎপাদন ও সেচে মাত্র ৫০ কোটি টাকারও কম পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছিল !!! আর এক টানা ৩০ বছর ( ১৯১১-১৯৪১ ) সমগ্র ভারতে তীব্র খাদ্যাভাব বিরাজ করেছে যার ফলে ৭১./. জনগণ হয় এক বেলা কোনো রকম খাবার খেত নতুবা অভুক্ত থাকত । তাই এমতাবস্থায় ব্রিটিশদের বসানো এ রেল থেকে ভারতের কী লাভ হয়েছে ?! আর এ রেল লাইন বসাতে গিয়েও ব্যাপক দুর্নীতি করেছিল ব্রিটিশ রেলওয়ে নির্মাণকারী ঠিকাদার কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান সমূহ । কারণ কানাডা অস্ট্রেলিয়ায়ও ঐ একই সময় রেল লাইন বসাতে যে পরিমাণ খরচ হত তার চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি খরচ হয়েছে ভারতে রেল লাইন বসাতে গিয়ে !! ভারতবাসীকে দুর্নীতির শিক্ষা ও সবক দিয়ে গেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসক ও শোষকেরা !! ভারতবর্ষে
দুর্নীতির শিক্ষা ও প্রসারটাও ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের সুকীর্তি সমূহের শীর্ষেই স্থান দেয়া উচিত !!!!